ড. আশরাফ সিদ্দীকি




জীবন ও কর্ম
বিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন যেসব ব্যক্তিত্ব, আশরাফ সিদ্দিকী তাঁদের একজন। চল্লিশ এর দশকের শুরুতে প্রতিশ্রুতিময় কবি হিশেবে তাঁর আত্মপ্রকাশ। কিন্তু কিছুদিনের মাঝেই অপার স্বাচ্ছন্দে তিনি বিচরণ করেছেন সাহিত্য ও সংস্কৃতির বিভিন্ন শাখায়। তিনি রচনা করেছেন পাঁচশ’র ও অধিক কবিতা। বাংলার লোকঐতিহ্য নিয়ে করেছেন গভীর গবেষণা। তিনি একাধারে প্রবন্ধকার, লোকসাহিত্যিক, ছোটগল্প লেখক এবং শিশু সাহিত্যিক। এ অঞ্চলের লোকসাহিত্য ও সংস্কৃতি লিপিবদ্ধ করতে ব্যাপক তৎপরতা শুরু করেছিলেন ড. দীনেশ চন্দ্র সেন, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ও কবি মনসুরুদ্দিনের মতো সর্বসৃজনশীল ব্যক্তিরা। পরবর্তী সময়ে সেই ধারা নিরন্তর গতিশীল রাখতে কাজ করেছেন যারা; ড. আশরাফ সিদ্দিকী তাদেরই একজন।

জন্ম ও বেড়ে উঠা
লোকসাহিত্যে সমৃদ্ধ টাঙ্গাইলের নাগবাড়ী গ্রামে ড. আশরাফ সিদ্দিকীর জন্ম ও শৈশব। তাঁর বাবা আব্দুস সাত্তার সিদ্দিকী ছিলেন বর্ধিষ্ণু কৃষক পরিবারের সন্তান এবং সৌখিন হোমিও চিকিৎসক। আর সেই সুবাদেই তাঁর বাড়ি ডাক্তার বাড়ি বলে পরিচিত। মা সমীরণ নেসা ছিলেন জমিদার কন্যা এবং একজন স্বভাব কবি। তাঁর লালন-পালনের দায়িত্বে ছিলেন সুরতির মা নামের এক গ্রামীণ গৃহকর্মী। সবকথাতেই মা ছড়া কাটতেন আর সুরতির মা শোনাতেন লোকগাঁথা। তাঁর মনোজগত গড়ে উঠে এইসব ছড়া, গান, প্রবাদ, ডাক, খনার বচন আর লোকগাঁথার মধ্য দিয়ে। বৃহত্তর পারিবারিক পরিসরে যাত্রা, সংয়ের নাটক, পালাগানের অনুষ্ঠান হতো। এসব অনুষ্ঠান উপভোগ করার জন্য আত্মীয়-স্বজনরা গ্রামে আসতেন, বাড়ির মেয়েরা নাইওরে আসতেন। ভাই-ভাগ্নে-বন্ধুসহ সবান্ধবে কিশোর আশরাফ সিদ্দীকি এগুলো রাতভর উপভোগ করতেন আর দিনভর সেগুলো অনুকরণের চেষ্ঠা করতেন। এই সাহিত্যিকের ছাত্রজীবন শুরু হয় নানাবাড়ির পাঠশালায়। ক্লাস টু থেকে সেভেন পর্যন্ত পিতার প্রতিষ্ঠিত রতনগঞ্জ মাইনর স্কুলে পড়েন। নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে রতনগঞ্জের সেই স্কুলটি। রতনগঞ্জ মাইনর স্কুলের পাঠ চুকিয়ে আশরাফ সিদ্দীকি ভর্তি হন ময়মনসিংহ জেলা স্কুলে। ময়মনসিংহে কলকাতা কেন্দ্রিক বৃহত্তর বাংলা সাংস্কৃতিক জগতের সাথে তাঁর পরিচয় ঘটে মাতুতালয়ে। এই সময়ে তিনি লিখতে শুরু করলেন কবিতা। সপ্তম শ্রেণীতে পড়াকালীন সময়েই নওরোজসহ একাধিক পত্রিকায় তাঁর লেখা নিয়মিত প্রকাশিত হতে থাকে। সেই কৈশোরেই সিদ্দিকী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে কিছু ছড়া সংগ্রহ করে পাঠান। রবীন্দ্রনাথ তার উত্তরে কিশোর; কবিকে আশীর্বাদ জানিয়ে চিঠি লিখেন। কবিগুরুর সেই আশীর্বাদ আজকের ড. সিদ্দিকীর নির্মাণে নিঃসন্দেহে বড় ভুমিকা রেখেছে। স্বাভাবিক কারণেই মেধাবী আশরাফ সিদ্দিকী’র পরিবার চেয়েছিল, তিনি ডাক্তার বা ব্যারিষ্টার হবেন। কিন্তু তার সৃজনশীল সাহিত্য মন তাকে পরিচালিত করে; পরিবারের সাজানো ছক থেকে বের হয়ে তার ভবিষ্যত তিনি নিজেই; রচনা করেন, চলে যান শান্তিনিকেতন। সেখান থেকে বাংলায় অনার্স নিয়ে পড়াশুনা করেন। একই সাথে চলতে থাকে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি। ড. আশরাফ সিদ্দিকী’র “রবীন্দ্রনাথের শান্তিনিকেতন” এবং “শান্তিনিকেতনের পত্র” পড়লে বোঝা যায় শান্তিনিকেতনের দিনগুলো তাঁর জীবন ও সংস্কৃতি চর্চাকে এক সুত্রে বেঁধে দিয়েছে। এই বিদ্যাপীঠের ঋতুভিত্তিক উৎসব, পার্বণ উদযাপনের সংস্কৃতি, বহু আলোকিত মানুষের সাহচর্য আর নানা ধর্মের মানব প্রেমের অনুষ্ঠান ও দর্শনগুলোর সাথে নিবিড় অনুষঙ্গ তাঁর মূল্যবোধ গড়ে তুলবার ক্ষেত্রে ব্যাপক প্রভাব রাখে। শৈশবের গ্রামীণ সংস্কৃতি ও শান্তিনিকেতনের প্রভাবে, জীবন দর্শনে এবং জীবনাচরণে তিনি হয়ে উঠেন একজন মানবপ্রেমিক।১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের কারণে শান্তিনিকেতন হতে অনার্স পরীক্ষা দেয়া তাঁর আর হলো না। ১৯৪৮ সালে করটিয়া সাদত কলেজে তাঁর পরীক্ষা নেয়া হল। ১৯৫০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে আশরাফ সিদ্দিকী এম এ ডিগ্রী লাভ করেন। ১৯৫৮ সালে আমেরিকার ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয় হতে আশরাফ সিদ্দীকি দ্বিতীয়বার এম এ করেন। একই বিশ্ববিদ্যালয় হতে ১৯৬৬ সালে লাভ করেন ফোকলোরে পিএইচডি।

চাকুরী জীবন
ড. আশরাফ সিদ্দিকী তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন ১৯৫০ সালে টাঙ্গাইলের কুমুদীনি কলেজে। এম এ পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর ১৯৫১ সালের মাঝামাঝি রাজশাহী সরকারি কলেজে প্রভাষক হিশেবে যোগ দেন। প্রখ্যাত পন্ডিত ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর আগ্রহে সে বছর নভেম্বর মাসে গবেষণার জন্য ডেপুটেশনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন।একবছর পরেই সিদ্দিকী ফিরে যান তাঁর পূর্বের কর্মস্থল রাজশাহী কলেজে। ১৯৫৭ সালে তিনি বদলি হয়ে আসেন ঢাকা কলেজে। সেখান থেকেই তিনি উচ্চ শিক্ষার উদ্দেশ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। পিএইচডি শেষ করে ১৯৬৭ সালে কিছুদিন ময়মনসিংহ আনন্দ মোহন কলেজের ছাত্রদের মাঝে জ্ঞানের আলো ছড়ান। সে বছরই ডিস্ট্রিক্ট গেজেটিয়ার এ এসিস্ট্যান্ট চিফ এডিটর হিশেবে যোগ দেন। ১৯৬৮ সালে তদানীন্তন কেন্দ্রীয় বাংলা উন্নয়ন বোর্ডের পরিচালকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ ডিসট্রিক্ট গেজেটিয়ার এর চিফ এডিটর নিযুক্ত হন। ১৯৭৬ সালে বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালকের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। দীর্ঘ ৬ বছর বাংলা একাডেমীতে কাজ করার পর, ১৯৮৩ সালে জগন্নাথ কলেজের প্রিন্সিপ্যালের দায়িত্ব পালন করেন। এই কলেজের প্রিন্সিপ্যাল হিশেবেই তিনি চাকুরি জীবন হতে অবসর গ্রহণ করেন। আশরাফ সিদ্দীকি’র কাছে কর্মই ধর্ম। তাই তিনি চাকুরি জীবন হতে অবসর নিলেও সাহিত্য এবং সংস্কৃতি জগত হতে এক মুহুর্তের জন্যেও অবসর নেননি।

প্রকাশনা
ড. আশরাফ সিদ্দিকী লেখা ও সম্পাদনায় এ যাবত প্রকাশিত হয়েছে ৭৫টি গ্রন্থ। ১৯৫০ সালে প্রকাশিত হয় কবির কালজয়ী প্রথম কাব্যগ্রন্থ “তালেব মাস্টার ও অন্যান্য কবিতা”। ২৮টি কবিতা নিয়ে রচিত এই কাব্যগ্রন্থের দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয় ১৯৬৩ সালে। ১৯৫৫ সালে প্রকাশ পায় তাঁর আরও দুটি কবিতার বই “বিষকন্যা” ও “সাত ভাই চম্পা “। ১৯৫৮ সালে কবি প্রকাশ করেন “উত্তর আকাশের তারা”। ১৯৭৬ এ প্রকাশ পায় “কুঁচ বরণ কন্যে”। স্ত্রীর মৃত্যুর পর পর লেখা কবিতাগুলো প্রকাশিত হয় ১৯৯৭ সালে নাম “সহস্র মুখের ভীড়ে”। লোকসাহিত্য বিষয়ে গবেষণা ধর্মী গ্রন্থ “লোকসাহিত্য” প্রকাশিত হয় ১৯৬৩ সালে। পরবর্তীতে একের পর এক প্রকাশ করে যান, আবহমান বাংলার লোককথা। “কিংবদন্তীর বাংলা”, “লোকায়ত বাংলা”, “আবহমান বাংলা”, “শুভ নববর্ষ”, “Folkloric Bangladesh”, “Bengali Riddles”, “Our Folklore Our Heritage”, “Tales from Bangladesh”, “Bengali Folklore” বইগুলো সেগুলোর মাঝে অন্যতম। বাংলার কিংবদন্তি এবং লোককাহিনী নিয়ে ড. সিদ্দিকী’র উপস্থাপনায় ৭০ এবং ৮০’র দশকে দীর্ঘ দিন ধরে ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত হয় দর্শকনন্দিত লোকনাট্য “হীরামন”, “মেঠোসুর” এবং “একতারা”। শিশুসাহিত্যের ক্ষেত্রে বংলাদেশে আজো একধরণের শুন্যতা বিরাজ করছে। শিশুসাহিত্যের প্রয়োজনীয়তা ড. সিদ্দিকী গভীরভাবে উপলব্ধি করেছিলেন। সেকারণেই, মা-বোনদের মুখে মুখে প্রচলিত লোককাহিনীকে ভিত্তি করে, তিনি রচনা করেন- “রুপকথার রাজ্যে”, “বাণিজ্যেতে যাবো আমি”, “অসি বাজে ঝনঝন”, “ছড়ার মেলা”, “আমার দেশের রুপকাহিনী”র সব আকর্ষণীয় বই। বাংলাদেশের লোককাহিনীকে আশরাফ সিদ্দিকী আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যান তাঁর Bhombol Dass The Uncle of Lion”(১৯৫৮) বইটির মাধ্যমে। ১৯৫৯ সালে ম্যকমিলান কোম্পানী বইটি প্রথম প্রকাশ করে। পরবর্তীতে বইটি জার্মান, জাপানি, উর্দুসহ প্রায় ১১টি ভাষায় অনূদিত হয়। বিভিন্ন দেশের শিশুসাহিত্যকে বাংলাদেশের কিশোরদের হাতে তুলে দিতে তিনি বেশ কিছু অনুবাদ সাহিত্য ও রচনা করেছেন। “এক যে ছিল সিংহ মশায়” (১৯৫৮), “পিন্টুর দিগবিজয়” (১৯৫৮) তাদের মধ্যে অন্যতম। আশরাফ সিদ্দিকী বেশকিছু ছোট গল্পও লিখেছেন। তাঁর বিখ্যাত ছোট গল্প “গলির ধারের ছেলেটি” দীর্ঘ সময় ধরে অষ্টম শ্রেণীর পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত ছিল। এ গল্পটি নিয়ে প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সুভাষ দত্ত ১৯৭৮ সালে “ডুমুরের ফুল” ছবিটি নির্মাণ করেন, যা দেশে এবং বিদেশে প্রশংসিত হয় এবং বাংলাদেশে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার লাভ করে। ড. সিদ্দিকী রচনা করেন চারটি উপন্যাস- “রাবেয়া আপা”, “আরশি নগর”, “গুণীন, শেষ কথা কে বলবে”। গুণীন রচিত হয়েছে দীর্ঘ সময়ের মাঠ পর্যায়ের গবেষণার মধ্য দিয়ে উঠে আসা সাপুড়েদের এক অজানা-মায়াময়, বিচিত্র জীবন প্রণালী নিয়ে। সম্প্রতি এটি নিয়ে তৈরি হয়েছে একটি ধারাবাহিক টিভি নাটক।

সংগঠক আশরাফ সিদ্দিকী
অঞ্চলভিত্তিক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ধরে রাখতে ড. আশরাফ সিদ্দিকী ছুটে বেড়িয়েছেন দেশে-বিদেশে। চেষ্টা করে গেছেন এসব সংরক্ষণের জন্য রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক পৃষ্ঠপোষকতা অর্জনের। তাঁর এই ক্লান্তিহীন কর্মকাণ্ডের ফলস্বরূপ ইউনেস্কোর সহযোগিতায় সোনারগাঁয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশ লোকজ মেলা। জসীম মেলা, হাসন রাজার মেলা, বিসিক মেলা’র মত সৃজনশীল উদ্যোগ গুলোর ক্ষেত্রে তিনি অনুঘটকের মত কাজ করেছেন। সুন্দরবন সাহিত্য সভা, লালন মেলা, মধুসুদন গ্রন্থাগার কমিটি, ছাত্রকল্যাণ ট্রাস্ট ইত্যাদির উদ্যোক্তারা সবসময় আশরাফ সিদ্দিকীকে সাথে পেয়েছেন। সিদ্দিকী এবং তার সঙ্গীদের দীর্ঘ দিনের গোষ্ঠীবদ্ধ এডভোকেসির ফলে আজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ত্রিশালে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়। আশরাফ সিদ্দিকী তাঁর জীবন ও কর্মের মধ্য দিয়ে শহর ও গ্রামের সংস্কৃতিকে এক সুতায় বাঁধতে চেয়েছেন। তিনি বিশ্বাস করেন, গ্রাম ও শহরের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল, এই দুয়ের ভেতরে বাংলাদেশিরা একই সাথে বসবাস করতে পারে। অর্জনঃ কেন্দ্রীয় বাংলা উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বে থাকাকালীন তাঁর সম্পাদনা চার খণ্ডে নজরুল রচনাবলী এবং প্রাচীন সাহিত্যিকদের রচনা (যেমন- জমিদার দর্পণ, গাজী মিয়ার বস্তানী ও লুতফর রহমান রচনাবলী) পুনঃপ্রকাশ পায়। উচ্চতর পর্যায়ে বাংলা ভাষায় পাঠ্যপুস্তক রচনার নেতৃত্ব দেন এই সময়ে। তাঁরই সময়কালে প্রথম বাংলা টাইপ পদ্ধতি মুনীর চোধুরীর তৈরী মুনির অপটিমা বাজারজাত হয়। ৬০’র দশকে শুরু হওয়া জেলা গেজেটিয়ার প্রকল্পের কাজ তাঁর দায়িত্বে সফলভাবে সম্পন্ন হয় ১৯৭৪ সালে। ১৯৭৩ সাল হতে মুক্তধারা প্রকাশনী ২১শে ফেব্রুয়ারতে বাংলা একাডেমীর মাঠে তাদের প্রকাশনা প্রদর্শন ও বিক্রির আয়োজন করে। বাংলা সাহিত্যের পাঠক বৃদ্ধির লক্ষ্যে ১৯৭৭ সালে আশরাফ সিদ্দিকী এ বই বিক্রির আসরকে প্রাতিষ্ঠানিক মাসব্যাপী বইমেলায় রূপান্তরিত করেন। সেদিনের সেই বইমেলা আজ বাঙ্গালির সাংস্কৃতিক জীবনের অন্যতম উৎসব পরিণত হয়েছে। বাংলা একাডেমীতে প্রথম বৈশাখী মেলার আয়োজন ও ড. সিদ্দিকী করেন। পরবর্তীতে এই মেলাটি শিল্পকলা একাডেমীতে স্থানান্তরিত হয়। এদেশের সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণে সিদ্দিকীর ছিল সুচিন্তিত অংশ গ্রহণ। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের মৃত্যুর পর তৎকালীন প্রেসিডেন্ট তাঁকে বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গণে সমাধিস্থ করার কথা ভাবছিলেন। সিদ্দিকী কর্তৃপক্ষকে বোঝাতে সক্ষম হন যে, বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গণ কবির যথোপযুক্ত স্থান নয়। পরবর্তীতে বাংলা একাডেমীর জরুরী সভার আলোচনায় স্থির হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে তাঁকে সমাধিস্থ করা হবে, যে আকাঙ্খা কবির গানে প্রকাশিত হয়েছিল। তিনি নানা সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। ১৯৮৮ সালে জাতীয় একুশে পদক, ১৯৬৪ সালে বাংলা একাডেমী পদক, শিশু সাহিত্যের জন্য ১৯৬৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক রিডার্স ডাইজেস্ট এ্যওয়ার্ড, ১৯৬৬ সালে ইউনেস্কো সম্মাননা ও ড. দীনেশচন্দ্র সেন সম্মাননা এগুলোর মধ্যে অন্যতম। আজ তাঁর বয়স ৮৬ বছর। কিন্তু তাঁর মন আজও আঠার বছরের তারূণ্যের ঊদ্দীপনায় ভরা। নতুন কোন মহৎ সৃষ্টি দেখলে আজও তিনি উচ্ছ্বসিত হন। তিনি সেই আলোকিত বাঙ্গালী যিনি চান সবাই ভালো থাকুক, সকলের মঙ্গল হোক আর আবহমান বাংলার কৃষ্টি ধারণ করে তাঁর দেশ ও সন্তানেরা পূর্ণাঙ্গ মানুষ হয়ে বেড়ে উঠুক।